জ্বর ও পরীর গল্প

পানি, পানি একটু পানি খাবো।

প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে বলে দীপ। কেউ এগিয়ে আসে না। মাথার কাছে মস্তবড় জানালা খোলা, সেখানে আকাশ আছে, আছে লক্ষ লক্ষ তারা আর এক খানা চাঁদ। দীপ কতকটা ঘোরের মাঝে আর কতকটা পিপাসায় হা করে চাঁদের আলো গেলে। বাইরের নারিকেল গাছটা ভীষন রকম দুলতে থাকে। মনে হয় ঝড় আসবে, ঝড়।


কখন জ্ঞান হারায় দীপ জানে না। একসময় তার মনে হয়, মাথায় কেউ পানি ঢালছে, বরফশীতল পানি। এই ভ্যাপসা গরমে পানি এত ঠান্ডা হলো কি করে! ফ্রিজ জিনিসটা কেনা হয়নি, দরকারের জিনিস। কিন্তু ঐ যে আলসেমি। বাইরে সত্যি ঝড় শুরু হয়ে গেছে, প্রলয়ংকারী ঝড়। কয় নাম্বার সিগনাল চলছে কে জানে! জাহান্নামে যাক দুনিয়া। আহ! শান্তি। শীতল পানির জলধারা।

তোমার আসতে কষ্ট হয়নি? বাইরে ব্যাপক ঝড়।

নাহ্‌, ঝড়ের মাঝে আসতে আমার আরো সুবিধে।
খিলখিল করে হেসে বলে পরী। এই হাসি দীপের খুব ভাল লাগে। সে উলটো ঘুরে পরীর মুখটা দেখে। কী অদ্ভুত মায়ায় যত্ন করে পানি ঢালছে।

আচ্ছা, তিনদিন ধরে আমার জ্বর। জ্বরের চোটে আমার এই আছি এই নাই অবস্থা। আর মাত্র তোমার আসার সময় হল? – অভিমানী কন্ঠে বলে দীপ।

কয়দিন পর পর জ্বর বাঁধাবা আর আমি এসে তোমার সেবা করবো, না? বৃষ্টি হলেই বুঝি ভিজতে নামতে হবে? তুমি কি কখনো বড় হবে না! – রাগ দেখায় পরী।

কী করবো বলো? বৃষ্টি দেখলে যে মাথা ঠিক থাকে না। লাফালাফি করতে মন চায়। এই দেখো কী সুন্দর ঝড় হচ্ছে। আমার সাথে ভিজবা, পরী?

চুপ, একদম চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি মাথায় পানি ঢালতে থাকি। জ্বর সেরে যাবে। তুমি ঘুমাও।

পরী, একটা গান শোনাবা!

পরী গাইতে শুরু করে আর শান্তির ঘুমে তলিয়ে যায় দীপ।
“দূর বনান্তে ছায়া নামে / সন্ধ্যে ঘনায় ঐ বুঝি
এই বিষণ্ণ দিন শেষে / তোমারেই শুধু খুঁজি”


হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে দীপের। পরী, পরী তুমি কই?
এই তো আমি এখানে, তোমার পাশে। দীপের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় পরী।
বাহ্‌, তোমার জ্বর সেরে গেছে একদম। এখন বলো তুমি কি খাবা?
উমম, গরম ভাত আর বেগুন ভাজি। - উত্তর যেন তৈরী ছিল দীপের কাছে।
আচ্ছা, তুমি একটা মিনিট বসো। আমি দেখি কি করতে পারি!
দীপ উঠে বসে। চলো আমি তোমাকে হেল্প করি।

গরম ভাতের ধুঁয়ো উঠছে। দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। ধুস্‌, কারেন্ট চলে গেল। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে মাঝখানে বসিয়ে দেয় দীপ। মোমের আলোয় কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পরীকে!

দীপের দুষ্টামি জাগে মাথায়। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। মুখে তুলে খাইয়ে দিবা?

আহ্লাদী একটা! – পরী সোহাগ করে দীপকে খাইয়ে দেয়। অনেক অনেক দিন পর দীপ খুব স্বাদ করে ভাত খায়, এক মুঠো গরম ভাত।

তারপর? তারপর শীতলপাটি বিছিয়ে বারান্দায় বসে দুজনে। ঝড় থেমে গেছে। বাইরে মিষ্টি জোছনা। পরীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে দীপ। আরামে তার চোখ বুজে আসে। চুলে হাত বুলিয়ে পরী গান ধরে –

“ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান / ঘুমাও আমার কোলে
ভালোবাসার নাও ভাসাবো / ভালোবাসি বলে”


মোবাইলের তীক্ষ্ণ চিৎকারে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে দীপ। চারপাশের আলোর খেলায় বুঝতে পারে বেলা অনেক আর সে আছে বারান্দায়। জ্বরের ঘোরে কখন বারান্দায় এসে ঘুমিয়েছে সে মনে করতে পারে না! মোবাইল বেজে চলছে ননস্টপ।

ঐ দীপ, কি অবস্থা তোর? জ্বর সারছে কিনা বল। দুইদিন ধরে অফিস করিস না। এইমাত্র বস এসে তোর কথা জিজ্ঞেস করে গেছে। অবস্থা সুবিধার না।

আমি আসতেছি। আধাঘন্টার মধ্যে আসতেছি দোস্ত। জ্বর সেরে গেছে।
দৌড়ে শাওয়ার সেরে খাবার টেবিলে যায় দীপ। এক পিস অবশিষ্ট বেগুন ভাজা আর বাসী ভাত দিয়ে নাস্তা করে আবার দৌড় লাগায়। এই দৌড়ে তাকে জিততে হবে।


-------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন