রিয়াল লাইফ হ্যাকস

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জীবন সম্পর্কিত ধ্যানধারণা অনেক বদলে যায়। এই যেমন স্কুলে পড়ার সময় চিন্তার সীমারেখাটা ছোট থাকে, ক্লাসে রোল প্রথম দিকে থাকলে অথবা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেডেল পাওয়া সামনের জীবনে যে সফলতার নিশ্চয়তা দেয় না, এটা বোঝার ক্ষমতা স্কুলবালকের থাকে না। তারপর সেই বুয়েট-মেডিকেলে চান্স পাওয়া এমনকি নর্থ আমেরিকার পিএইচডি ডিগ্রীও ঠিক যেন সাফল্য নয়! একজন সাধারণ ছাত্র পরিনত বয়সে অনেক অসাধারণ কিছু হয়ত করতেই পারে, এজন্য সেই বিখ্যাত ডায়লগ আছে – বইয়ের কভার দেখে বই কে মূল্যায়ন করো না।

গৃহবন্দী দু’জন

ঘড়ির কাঁটায় রাত সাতটা চল্লিশ। আকাশে গাঢ় অমানিশা, খুব বৃষ্টি হবে মনে হয় আজ। তমাল আয়োজন করে রুমের ভেতর থেকে চেয়ার এনে বারান্দায় বসে। বৃষ্টির সাথে সাথে গান শুনতে বেশ লাগে। এমনিতে গান শোনার অবসর হয় না, আজকাল অখণ্ড অবসর পাওয়া যায়। ইউটিউব থেকে র্যান্ডম একটা ট্রেন্ডি গান ছাড়ে। মৌলিক গান পারবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু এই নোবেল ছেলেটা গানের কভার ভালই করে। তার সিলেকশন ভাল।
কেউ না জানুক মন তো জানে / মনের ও যে কষ্ট আছে / সেই বেদনা লুকিয়ে রাখি হাজার ছলনায় …
মানুষ বলে জীবন খাতায় / ভুলের হিসেব পাতায় পাতায় / দূরের থেকে ভালো সবই, কাছে গেলে নাই …
যখন দেখি চাওয়া পাওয়া শূন্যতে মিলায় / তখন আমি এই শহরে কষ্ট বেঁচে খাই।

লাইফ অফ লকডাউন

করোনা-বন্দী জীবন শেষ হলে আমি মায়ের কাছে যাব। মায়ের হাতে রান্না লাল শাক আর গরুর মাংস ভুনা দিয়ে ভাত খাব। এই ঈদে বাড়ী যাবার কথা ছিল, জানি সম্ভব না। হয়ত পরের ঈদে বাবার সাথে আবার নামাজে যাব। আমার ভাই কে নিয়ে বুফে খেতে যাব, কোনদিন যাওয়া হয় নাই এক সাথে। নিতান্তই স্বাভাবিক কিছু চাহিদা আমার জন্য এখন অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার মনে হচ্ছে। প্রিজন ব্রেক বা শশাঙ্ক রেডেম্পশন মুভির মত অবিশ্বাস্য কিছু করে অর্জন করতে হবে এমন একটা অবস্থা।

কে জানে দেশে গেলে প্রবাসী হিসেবে ধাওয়া খেতে হতে পারে, আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়া যাবে না, এমনকি মানুষ বাড়ী ছাড়াও করতে পারে – এটাই এখন স্বাভাবিক ঘটনা। কোন বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করা যাবে না, কিছু অবিবেচকের জন্য প্রবাসীদের যে নবাবজাদা ইমেজ পাবলিকের মনে গেঁথে বসেছে, করোনা পরবর্তী যুগে সেই রেশ থেকে যাবে। মানুষজন বেফাঁস বলে ফেলতে পারে – আরে মিয়া আপনাদের জন্যই আজকে এই দুর্দশা দিন দেখতে হল, ঐ ইহুদী নাসারাদের দেশ থেকে বেঁচে ফিরলেন কেমনে?

অন্ধকার সময়

এক মাস আগে সিঙ্গাপুর করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অরেঞ্জ লেভেলে গিয়েছে যেটা রেড জোন / লকডাউনের আগের ধাপ, তখন আক্ৰান্ত সংখ্যা ছিল ৩৩ জন আর এখন ২১২ জন৷ সিঙ্গাপুর এখনো অরেঞ্জ লেভেলে আছে। যারা সম্ভব হোম অফিস করে, কেউ সাপ্তাহিক রোটেশন করে, কেউ টীম দুইটা লোকেশনে ভাগ করে দিয়েছে, বাকীরা নরমাল অফিস করে, স্কুল-কলেজ সব খোলা।
সারা বিশ্বে গ্রোসারি ফাঁকা, টিস্যু ক্রাইসিস, স্যানিটাইজার বিজনেস - এগুলো এক মাস আগে আমরা সিঙ্গাপুরে দেখেছি, সরকার এই অবস্থা কন্ট্রোল করেছে এক সপ্তাহে। এখন ফেয়ারপ্রাইস (সিঙ্গাপুরের ওয়ালমার্ট ভার্সন) সারি সারি টিস্যু, বিভিন্ন ব্রান্ডের স্যানিটাইজার মানে চয়েজ করার অপশন পর্যন্ত আছে।

নীরার জন্য ভালোবাসা ...

নগরীর ধুলোমাখা রাস্তায় একা একা হাঁটছে হাসান। রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে তার মন্দ লাগে না, অন্তত বাসায় বসে ঝিমানোর থেকে ব্যাপারটা অনেক ভাল, সঙ্গী থাকে না সবসময়। তার অনেক বন্ধু - স্রেফ বন্ধু। এই অদ্ভুত বিষণ্ণ শহরে তার জন্য কোন প্রেমিকা অপেক্ষা করে থাকে না, তবে সে অপেক্ষা করে থাকে একজনের জন্য!


বহুদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলে ঝর্ণার জলের মতো
হেসে উঠবে, কিছুই না জেনে। নীরা, আমি তোমার অমন
সুন্দর মুখে বাঁকা টিপের দিকে চেয়ে থাকবো। আমি অন্য কথা
বলার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করবো মনে-মনে
ঘর ভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে নিজস্ব চোখে তাকাবো।
তুমি জানতে পারবে না — তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে
আমার একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা।

সুনীল – প্রিয় কবি... প্রিয় লেখক... কিংবা প্রিয় আশ্রয়! হাসান বড় হয়েছে সুনীল পড়ে, হাসান নিজেকে চিনতে শিখেছে সুনীলের কাছে, এরপর হাসান প্রেমিক হয়েছে নীরার জন্য!

ফেইসবুক বিহীন দিনরাত্রী


এমন একটা জগৎ কল্পনা করা যাক, যেখানে ফেইসবুক নাই। কী হবে? কোন সমস্যা হবে কি?

হ্যাঁ, শুধু ফেইসবুক না, এর বিকল্প হতে পারত এমন কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট পৃথিবীতে নাই ধরে নেই। মানুষ কি চলতে পারবে না? সময় কাটবে না?

এইসব দিনরাত্রী

রাত্রীকে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে টিউশনিতে যাচ্ছি। অনেক দেরী হয়ে গেছে। রাস্তা পার হয়ে আমি অপর পাশে, অনেক দূর হাঁটতে হবে, তারপর বাস ধরবো। কি মনে করে রাস্তার অন্যদিকে তাকালাম, দেখি রাত্রী আমার দিকে আসছে। আরে বলেই তো আসলাম, কালকে দেখা হবে, রাতে ফোন দিব। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম, জোরে চিৎকার দেই, এই তুমি আবার এদিকে আসতেছ কেন? মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম শুরু হয়েছে, কোন কথা বের হল না। হঠাত দেখি উল্টো পাশ থেকে বাস আসতেছে। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করলাম রাত্রীর নাম ধরে, কোন শব্দ বের হয় না। পাগলের মতন লাগছে। আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত। প্রচন্ড চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারছি না, বাসটা এসে রাত্রীর উপর দিয়ে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয় সবকিছু অন্ধকার।