যখন মন তোমাকে চায়

খুব ভোরে যখন ঘুম থেকে উঠি এত্ত খারাপ লাগে যে বলার না। দুনিয়াদারী সব বিষাদ লাগে। তারপরেও জীবন-জীবিকা আর সর্বোপরি বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। আধঘন্টার এদিক ওদিক পরে আমাকে দেখা যায় বাসের অপেক্ষায়। একটার পর একটা বাস আসে আর যায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি। হঠাৎ কোন অসতর্ক মুহূর্তে হারানো দিনের কথা মনে পড়ে। সেই ভোরবেলা, বুয়েট বাস, ক্যাম্পাস … … আর কারো কথা কি মনে পড়ে?


বাস পছন্দ না হলে আমার উঠতে মন চায় না। এই লাইনে দুই জাতের বাস আছে। একটা ছোট্ট খুপরি টাইপের আরেকটা মোটামোটি চলনসই মাঝারি সাইজের। মাঝারিটার অপেক্ষায় থাকি। দাঁড়ানোর জায়গা থাকলে উঠে পড়ি আল্লাহর নামে। আল্লাহ একটা সিট যেন তাড়াতাড়ি পাই, দেড়ঘন্টা দাঁড়ায়া থাকতে চাই না। যখন সিট পেয়ে যাই আরামসে কানে গান গুঁজে দেই। ফুয়াদ-মিলা-হাবীব-ন্যান্সি পাঁচমিশালী রঙ বেরঙের গান। চোখ থেকে ঘুম তাড়ানো আর সারাদিনের জন্য নিজেকে চার্জআপ করার অব্যর্থ প্রয়াস। কথাবান্ধবীদের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে ভাবি, কি দরকার প্রেমিকার? এরা তো আছেই। যখন চাই কাছে পাই।

মাঝে মধ্যে সুখ সয় না। বাসে উঠে আমি যে কাজটা করি, লোকজনকে ঠেলেমেলে যেভাবে পারি লেডিস সিট থেকে একশহাত নিরাপদ দূরত্বে বাসের পিছনদিকে সরে যাই। প্রথম তিনসারি ভাল কথা পারতপক্ষে পাঁচ সারির মধ্যে বসি না, সিট ছেড়ে আবার দাঁড়ানোর কষ্ট সীমাহীন। তবু দূর্ঘটনা ঘটে। যেমন একদিন বসে আছি পেছনের দিকের একটা সিটে। পিছনের দরজা দিয়ে উঠলেন এক মহিলা, সাথে চার-পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা। আশপাশের এত মানুষজন বাদ দিয়ে তার চোখ পড়লো আমার উপর, “এই ছেলে আমার পুলাটারে কোলে নাও।” অবস্থা বেগতিক। আমি সুন্দরভাবে সিট ছেড়ে দিয়ে বলি, “না, ঠিক আছে আন্টি। আপনেই কোলে নিয়ে বসেন।”

রিকশায় যেতে যেতে দুপাশের প্রাসাদ অট্টালিকাগুলো দুচোখ ভরে দেখি। যতবার দেখি ততবারই ভাল লাগে। সকালের ফুরফুরে আবোহাওয়ায় দালানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। আমার অফিস এখন পর্যন্ত নারী বর্জিত। যতক্ষন অফিস থাকি কাজ নিয়ে থাকি, ফাউ আলাপ বা ভাব দেখানোর সুযোগ নাই। কি আছে আর জীবনে। শুধু ধুমায়া কোডিং, বাকী সব ধুঁয়া ধুঁয়া।

সময় কোথা দিয়ে যায় টের পাই না। সন্ধ্যায় আবার সেই দীর্ঘ বাসজার্নি। ক্লান্ত অবসন্ন এই আমি ঢুলতে ঢুলতে একসময় গন্তব্যে নামি। তারপর ছোট্ট একটু পথ। হাঁটতে থাকি আর সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরে প্রথমবারের মত নিজেকে কেন যেন ভীষনরকম একা মনে হতে থাকে - একা বিষণ্ণ।



কেন এই নিঃসঙ্গতা কেন এই মৌনতা
কেন এই নিঃসঙ্গতা কেন এই মৌনতা
আমাকে ঘিরে
কেউ না জানুক কার কারনে
কেউ না জানুক কার স্মরণে
মন পিছু টানে
তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে
---------------------------------------------------
---------------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন