রিয়াল লাইফ হ্যাকস

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জীবন সম্পর্কিত ধ্যানধারণা অনেক বদলে যায়। এই যেমন স্কুলে পড়ার সময় চিন্তার সীমারেখাটা ছোট থাকে, ক্লাসে রোল প্রথম দিকে থাকলে অথবা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেডেল পাওয়া সামনের জীবনে যে সফলতার নিশ্চয়তা দেয় না, এটা বোঝার ক্ষমতা স্কুলবালকের থাকে না। তারপর সেই বুয়েট-মেডিকেলে চান্স পাওয়া এমনকি নর্থ আমেরিকার পিএইচডি ডিগ্রীও ঠিক যেন সাফল্য নয়! একজন সাধারণ ছাত্র পরিনত বয়সে অনেক অসাধারণ কিছু হয়ত করতেই পারে, এজন্য সেই বিখ্যাত ডায়লগ আছে – বইয়ের কভার দেখে বই কে মূল্যায়ন করো না।

মানুষের গড় আয়ু হিসেব করলে, জীবনের প্রায় অর্ধেকটা পার করে ফেলার পর আমার প্রতিদিন নতুন নতুন বোধের উদয় হয়। মনে হয় যে জিনিসটা এমন না হয়ে তেমন করা যেত। আসলে অভিজ্ঞতার একটা গুরুত্ব আছে। পুরনো অনেক গল্প স্মৃতি মনে পড়লে এখন ভিন্ন অর্থ বুঝতে পারি।

রোল ১/২/৩ হওয়ার সুবাদে না বরং কিছু এক্স-ফ্যাক্টরের কারণে যেই ছেলে বা মেয়েটা ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়, সে কর্ম জীবনে লীডার/ম্যানেজার রোলে এমনিতে ভাল করবে। তারপর যারা বিতর্ক করে আমি শিউর তারা ক্রিটিক্যাল ক্লায়েন্ট মিটিং গুলো ভাল হ্যান্ডেল করতে পারে। এমনকি কোচিং সেন্টারে দাঁড়িয়ে পড়ানোর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের বড় বড় প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনের বেস তৈরী হয়। আর ইয়াং বয়স থেকে বডি ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করলে সেটা লাইফটাইম ব্যাকআপ দিবে।

ফ্যামিলি মানুষের সবথেকে বড় সম্পদ, যার ফ্যামিলি নাই তার কিছুই নাই। আমার তো গর্ব হয় হিংসাও হয় যখন কোন বন্ধুকে দেখি বাবা-মা-বউ-ছেলে-মেয়ে-ভাই-বোন নিয়ে একসাথে টাইম পাস করছে, এটা একটা অপার্থিব শান্তি, মন থেকে দোয়া করি তাদের জন্য। সেই সাথে নিজের রিয়ালাইজেশন হয় যে বাবা-মা-ফ্যামিলি কে আমিও হয়ত আরো সময় দিতে পারতাম।

লাইফে রিস্ক নেয়া উচিত। বয়স যত কম রিস্ক নেয়া তত সহজ, পড়ে গেলে উঠে দাঁড়ানোর টাইম থাকে। সময় চলে গেলে মাথার উপরে বোঝা ভারী হতে থাকবে আর কখনোই রিস্ক নেয়া হয়ে উঠবে না। ছোট একটা এগজ্যাম্পল মনে পড়ে, একইসাথে দুটো চাকরীর অফার পেলাম – একটাতে কাজ শেখার দারুণ সুযোগ, চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার স্যাপার; আরেকটাতে ভাব বেশী কাজ কম, গাড়ী দেবে, সুন্দর অফিস দেবে। আমি ভাবের পিছনে গেলাম, পাঁচ বছর নষ্ট করলাম। এখন মনে হয় অন্যটাতে গেলে আজকে অন্যকিছু হতে পারত।

প্রেম করা ভাল কাজ, আর তার থেকে বেশী বেশী ছ্যাঁকা খাওয়া উত্তম। আমার মত অনেক বোকা ছেলে আছে খালি ক্রাশ খায়, সাহস করে প্রপোস করে না কারণ জানে ব্যার্থ হবে। কিন্তু ঐ ব্যার্থতা জীবনে ভাল কিছু নিয়ে আসতে পারে। রিজেক্ট হলে নিজের নেগেটিভ সাইড গুলো সামনে আসে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা যায়, সেইফ জোনে বসে থেকে শুধু ডিপ্রেশন রোগ হবে, আর কিছু না।

দশ বছর প্রফেশনাল লাইফ দেখে বুঝলাম, বিনয়ী হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটা পদক্ষেপে। এই যে মিটিং এর পরে দরজা খুলে আরেকজন কে আগে যেতে দেয়া, নিজের চেয়ার ঠিক জায়গায় রাখা, যত ছোট কাজ হোক ছোট থেকে বড় সবাইকে ধন্যবাদ দেয়া, এগুলো একজন মানুষকে দারুণ ভাবে রিপ্রেজেন্ট করে। কোনটা শো-অফ আর কোনটা নেটওয়ার্কিং, স্মার্ট মানুষ সহজে বুঝতে পারে। আজকের পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পরে যে কবে কিভাবে কাজে আসবে ইউ নেভার নো।

শেষ করি হেল্প করা নিয়ে। যখন থেকে একটা বাচ্চা বুঝতে শেখে কোন রিলেটিভ তার টেইক কেয়ার করে, ভালবাসে, সে কিন্তু সেটা মনে রাখে। বড় হবার পরে একসময় না একসময় যদি তার সামর্থ্য হয় কোন একভাবে সেই রিটার্ন আসবে। আজকে একজন কে উপকার করলে সেটার পুরস্কার অন্য কারো মাধ্যমে অন্য কোন সময়ে আসবে, এটা আমার বিশ্বাস।


~~~ ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ~~~

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন