অন্ধকার সময়

এক মাস আগে সিঙ্গাপুর করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অরেঞ্জ লেভেলে গিয়েছে যেটা রেড জোন / লকডাউনের আগের ধাপ, তখন আক্ৰান্ত সংখ্যা ছিল ৩৩ জন আর এখন ২১২ জন৷ সিঙ্গাপুর এখনো অরেঞ্জ লেভেলে আছে। যারা সম্ভব হোম অফিস করে, কেউ সাপ্তাহিক রোটেশন করে, কেউ টীম দুইটা লোকেশনে ভাগ করে দিয়েছে, বাকীরা নরমাল অফিস করে, স্কুল-কলেজ সব খোলা।
সারা বিশ্বে গ্রোসারি ফাঁকা, টিস্যু ক্রাইসিস, স্যানিটাইজার বিজনেস - এগুলো এক মাস আগে আমরা সিঙ্গাপুরে দেখেছি, সরকার এই অবস্থা কন্ট্রোল করেছে এক সপ্তাহে। এখন ফেয়ারপ্রাইস (সিঙ্গাপুরের ওয়ালমার্ট ভার্সন) সারি সারি টিস্যু, বিভিন্ন ব্রান্ডের স্যানিটাইজার মানে চয়েজ করার অপশন পর্যন্ত আছে।

মাত্র চার বছর এখানে আছি, দেশের মানুষের জন্য সরকারের নিবেদন দেখলে সকাল বিকাল সালাম দিতে মন চায়। সব গুলো স্কুল ক্লিনিং সার্টিফায়েড হতে হবে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ক্লিনিং চলছে, তাবলীগ থেকে দুইজন আক্রান্ত হবার পর সব মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করে ক্লিনিং করতেছে। সিঙ্গাপুর একটা ছোট্ট শহর, এক শহরের দেশ। বেশ ঘনবসতি কিন্তু নিয়ম মেনে চললে হয়ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একটা বিশাল দেশ যেমন ইটালী আমেরিকা চাইলেও পারা যায়না...
মাস খানেক আগে সিঙ্গাপুর যখন আক্রান্তের লিস্টে চায়নার পরে দুই নম্বরে ছিল, মানুষের মধ্যে সেইম প্যানিক ছিল। আমার মা কান্নাকাটি করে দেশে আসতে বলত, সে ভীতু মানুষ ভয়ে খবর দেখেনা, আত্মীয় স্বজন খোঁজ নিয়ে চলে আসতে বলত দুই মাসের ছুটি নিয়ে। পাঁচজন বাঙালী আক্রান্ত হবার পর অবস্থা আরো খারাপ, কিছু লোক চাকরী ছেড়ে দেশে চলে গেল। এখন ইটালীর বাঙালী যারা দেশে যাচ্ছে তেমন, জানের মায়া বড় মায়া, তারপর ফ্যামিলির চাপ আছে। আমাদের আবেগ বেশী, বুদ্ধি কম। একটা উন্নত দেশ ইটালী সিঙ্গাপুর ছেড়ে চরম অব্যবস্থাপনার সোনার বাংলাদেশে গেলে যে বাঁচার সম্ভাবনা কম, নিজের বৃদ্ধ বাবা মায়ের জীবন সংকটে পরতে পারে সেই ভাবনা মাথায় ধরে না...
কী এক অসহায় একটা অবস্থা, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না সুস্থ্য আছি কিনা। দুইবেলা তাপমাত্রা মাপা হয়, হাত ধোঁয়া হয়, উন্নত দেশের উন্নত অবস্থায় থেকে হয়ত আমরা লাকী কিন্তু ভরসা পাই না। আমি রোবট কিসিমের মানুষ, নিয়ম করে মায়ের সাথে উইকেন্ডে একবার কথা বলতাম, বাবার সাথে কথা বলি আরো কম। করোনার কারণে মা নিয়ম করে দিয়েছে প্রতিদিন কথা বলতে হবে, একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে... আমার দেশপ্রেম তেমন নাই, দেশে দু বছরে একবার যাই, তারপরেও আপন জনের জন্য খারাপ লাগে।অন্ধকার একটা সময় আরো ঘনিয়ে আসছে, আমার দেশের সরকারের কোন বিকার নাই!
খুব হতাশ বিষণ্ণ লাগে, জানি না কবে আবার দেশে যাব? কবে আমার মা-বাবা-ভাইয়ের সাথে দেখা হবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন